বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৬:১৯ অপরাহ্ন

‘চারজনই ঈদের আগে বাড়িতে এসেছে, কিন্তু লাশ হয়ে’

‘চারজনই ঈদের আগে বাড়িতে এসেছে, কিন্তু লাশ হয়ে’

‘চারজনই ঈদের আগে বাড়িতে এসেছে, কিন্তু লাশ হয়ে’
ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনিদের ছবি বুকে নিয়ে চোখের পানি ফেলেন বকুল বেগমছবি: সংগৃহীত

‘ঈদে ছুটি পেলে সোহেল রানা বাড়ি আসত। বাপ-ছেলে একসঙ্গে ঈদের জামাতে যেতাম। আজ একসঙ্গে ঈদের জামাতে যেতে পারলাম না; আর কোনো দিনও যেতে পারব না। ঈদের নামাজ শেষে কবরস্থানে গিয়ে ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনির কবর জিয়ারত করে ঘরে ফিরলাম।’

কথাগুলো বলছিলেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌকাডুবিতে মৃত সোহেল রানার বাবা আবদুল আলিম।

সোহেল রানা ভৈরব হাইওয়ে থানার কনস্টেবল ছিলেন। গত ২২ মার্চ নৌকাডুবিতে সোহেল রানা, তাঁর স্ত্রী মৌসুমী আক্তার এবং তাঁদের দুই সন্তান মাহমুদা সুলতানা (৭) ও রাইসুল ইসলাম (৫) মারা যায়। সোহেল রানার বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ফাতেহাবাদ গ্রামে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বাড়িতে সোহেল রানার বাবা আবদুল আলিমের সঙ্গে কথা হয়।

আবদুল আলীম ও রওশন আরা বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সোহেল রানা দ্বিতীয়। ভৈরব হাইওয়ে থানায় যোগ দেন সাত মাস আগে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন ভৈরবেই।
আরও পড়ুন

আবদুল আলীম বলেন, ‘নৌকাডুবির কয়েক দিন আগে সোহেল রানা জানিয়েছিল, এবারের ঈদে বউ ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাড়িতে আসবে। চারজনই ঈদের আগে বাড়িতে এসেছে, কিন্তু লাশ হয়ে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর ভেবেছিলাম, পরিবারের সবাই হয়তো মারা যায়নি। সেই রাতে দেবীদ্বার থেকে ভৈরবে যেতে যেতে আল্লাহকে ডেকেছি, আমার জীবনের বিনিময়ে যেন সোহেলের পরিবার বেঁচে যায়। টানা তিন দিন মেঘনার পাড়ে থেকে চারজনের লাশ নিয়ে বাড়ি আসি।’

ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনিদের শোকে পাগলপ্রায় বকুল বেগম। তাঁদের ছবি বুকে নিয়ে চোখের পানি ফেলেন। বকুল বেগম বলেন, ‘সোহেল কাজপাগল ছিল। বাসায় ফিরলেই মোবাইলে কল দিত। ভিডিও কলে প্রায়ই বউমা ও নাতি-নাতনিকে দেখাত, আর বলত, “সবাই একসাথে ঈদ করব।”’

ওই দুর্ঘটনায় বেঁচে গেছেন সোহেলের ভাগনি মারিয়া আক্তার। তিনি মায়ের সঙ্গে মামা বাড়িতে ঈদ করতে এসেছেন। দুর্ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি প্রতিনিয়ত তাঁকে তাড়া করছে। মারিয়া বলেন, ‘মামার বাড়িতে হয়তো ঈদের পরদিন আসা হতো। কিন্তু আমাদের মনে তো আর ঈদ আনন্দ নেই। নৌকাডুবির সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল মামার দুই সন্তান মাহমুদা ও রাইসুল। কখন যে তারা স্রোতের টানে হারিয়ে গেল, বুঝতে পারিনি। সেই ভয়াবহ স্মৃতি মনে হলে রাতে ঘুমাতে পারি না। ঈদের সময়টা নানা-নানির সঙ্গে থেকে তাঁদের সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছি।’

মেঘনা নদীতে পাশাপাশি দুটি রেল ও একটি সড়কসেতু রয়েছে। তিনটি সেতু ঘিরে ভৈরব প্রান্তে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঘাটে বেশ কয়েকটি পর্যটকবাহী নৌকা রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নৌকার মাধ্যমে মেঘনা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করেন। বিশেষ করে শুক্রবার পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যায়। গত ২২ মার্চ দুর্ঘটনার দিনটি ছিল শুক্রবার। ওই দিন বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ১৫-১৮ জন আরোহী নিয়ে একটি নৌকা ঘাট ছেড়ে যায়। তীরে ফিরে আসার সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়।

 

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana